নওগাঁয় সরিষা ফুল থেকে কোটি টাকার মধু সংগ্রহ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর মাঠ যেন সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। সরিষার এ মৌসুমে ক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মধু চাষ করছেন মৌচাষিরা। এতে করে ফুলে পরাগায়নে বাড়ছে সরিষার আবাদ। অন্যদিকে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন মৌচাষিরা। ধারণা করা হচ্ছে, এবছর সরিষা ফুল থেকে প্রায় এক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৪৮হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এবছর জেলায় পাঁচ হাজার ৫৭২টি মৌবক্স স্থাপন করা হয়েছে। যেখান থেকে প্রায় ৪০ হাজার কেজি মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২৫০ টাকা কেজি হিসেবে প্রায় এক কোটি টাকার মধু সংগ্রহ হবে। গত বছর প্রায় ৩৩ হাজার কেজি মধু সংগ্রহ হয়েছিল।

জেলার মান্দা উপজেলার তরুণ উদ্যোক্তা মৌচাষি রুমিনুল ইসলাম রুস্তম বলেন, রাজশাহী জেলার মোহনপুর উপজেলার দর্শনপাড়া গ্রাম থেকে ১৫০টি মৌবক্স নিয়ে এসেছি। যেখানে প্রতিটি বক্সে আটটি করে এক হাজার ফ্রেম রয়েছে।

মোহনপুর উপজেলার কেশরহাট গ্রামের আরেক তরুণ উদ্যোক্তা মৌচাষি সারফিন আহমেদ ২০টি মৌবক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছেন। ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করে খাঁটি (অর্গানিক) মধু অল্প দামে পেয়ে খুশি স্থানীয়রা। অন্যদিকে মধু সংগ্রহ করে আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন মৌচাষিরা। তবে স্থানীয় যুবকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে তারাও মৌসুমে মধু সংগ্রহ করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারবে। বাণিজ্যিক ভাবে মধু সংগ্রহ সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

মৌচাষি রুমিনুল ইসলাম রুস্তম বলেন, সাত বছর ধরে কৃত্রিম পদ্ধতিতে মৌবক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করছি। ১৫০টি মৌবক্স থেকে তিন দফায় প্রায় ৩০ মণ মধু পেয়েছি। যার পাইকারি বাজার মূল্য ২৫০ টাকা কেজি হিসেবে তিন লাখ টাকা। আর খুচরা বিক্রি হয় ৩০০ টাকা কেজি। এ বছর নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সরিষা ফুল থেকে প্রায় ১০ লাখ টাকার মধু পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এরই মধ্যে শ্রমিক ও পরিবহনসহ আনুষঙ্গিক সব খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকবে প্রায় সাত লাখ টাকা।

তিনি আরও বলেন, সরিষা ফুলসহ বছরে প্রায় ছয় মাস বিভিন্ন ফুল থেকে মধু সংগ্রহ করা হয়। বাকি ছয়মাস মৌমাছিকে পোষতে হয়। এতে প্রায় দেড় লাখ টাকার মতো খরচ হয়। যেসব মধু সংগ্রহ করা হয় রাজশাহী থেকে পাইকারি ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন প্রসাধনী তৈরি কোম্পানি এসে পাইকারিতে কিনে নিয়ে যায়।

মৌচাষি সারফিন আহমেদ বলেন, প্রশিক্ষণ নিয়ে তিন বছর ধরে মধু সংগ্রহ শুরু করেছি। এ বছর ২০টি বক্স দিয়ে মধু সংগ্রহ করা হচ্ছে। ২০টি বাক্সে ১৬০টি ফ্রেম আছে। চারবার মধু সংগ্রহ করেছি প্রায় ৩০০ কেজি। সরিষা ফুল থেকে এ বছর লক্ষাধিক টাকা আয়ের আশা। যেখান থেকে প্রায় খরচ হবে ২০ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ নিয়ে যে কেউ চাইলে মধু সংগ্রহ করে মৌসুমে বাড়তি টাকা আয় করতে পারবে।

মান্দা উপজেলার ছোটমল্লুক গ্রামের কৃষক আব্দুল আজিজ বলেন, এ বছর দুই বিঘা জমিতে দেশিয় জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌবক্স স্থাপন করেছে মৌচাষিরা। এবছর আবহাওয়া ভাল থাকায় সরিষার আবাদও ভাল হয়েছে।

একই উপজেলার জয়বাংলা গ্রামের সত্যেন কুমার সরকার বলেন, দেড় বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। মৌচাষিরা জমির পাশে বক্স রেখে মধু সংগ্রহ করছেন। কয়েকদিন পর পর তারা মধু সংগ্রহ করে। তারা খাওয়ার জন্য আমাদের মধু দেয়। একেবারেই নির্ভেজাল মধু। এমনকি মধু কম দামেও পাওয়া যায়।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবু হোসেন বলেন, এ বছর শতাধিক মৌচাষি জেলায় পাঁচ হাজার ৫৭২টি মৌবক্স স্থাপন করে মধু সংগ্রহ করছে। এরই মধ্যে প্রায় ২৯ হাজার ২৬০ কেজি মধু সংগ্রহ করা হয়েছে। আরও সংগ্রহ হবে। এছাড়া সরিষা ফুলে পরাগায়নের ফলে উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে তাও পূরণ হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *