নারী এশিয়া কাপে আবারও হারলো স্বাগতিক বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। মালয়েশিয়াকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে জয়ে ফিরলেও ভারতের বিপক্ষে পাত্তাই পেলেন না নিগার সুলতানা, রুমানা আহমেদরা। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের ৫৯ রানে হারিয়ে চতুর্থ জয় তুলে নিলো ভারত। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করা ভারতের সংগ্রহ ছিল ৫ উইকেটে ১৫৯ রান। জবাবে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০০ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাট হাতে ফিফটি হাঁকানোর পর বোলিংয়ে দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন শেফালি ভার্মা।
এ জয়ে পাঁচ ম্যাচে ৮ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালে এক পা দিয়ে রাখলো ভারতের মেয়েরা। বাংলাদেশ ম্যাচ খেলেছে চারটি। সমান দুইটি করে জয়-পরাজয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে এখনও সেমিফাইনালে খেলার আশা টিকিয়ে রেখেছে নিগার সুলতানা জ্যোতির দল। ২০১৮ সালের এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে ১৪২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। সেটি টাইগ্রেসদের সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড। তাই আজ ১৬০ রান টপকে জিততে হলে গড়তে হতো নতুন রেকর্ড। যা করা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের মেয়েদের।
১৬০ রানের বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৪৫ রান যোগ করেন মুর্শিদা খাতুন ও ফারজানা হক পিংকি। কিন্তু দুজন মিলে খেলে ফেলেন ৯.১ ওভার। সাজঘরে ফেরার আগে মুর্শিদা ২৫ বলে ২১ ও ফারজানা পিংকি করেন ৪০ বলে ৩০ রান। তিন নম্বরে নেমে অধিনায়ক নিগার সুলতানা রানের গতি বাড়ানোর প্রয়াস চালান। কিন্তু তার ২৯ বলে ৩৬ রানের ইনিংসে পরাজয়ের ব্যবধান কমা ছাড়া আর কোনো ফায়দা হয়নি। এরপর আর কেউই তেমন কিছু করতে না পারায় ১০০ রানের বেশি যায়নি বাংলাদেশের ইনিংস।
ভারতের পক্ষে বল হাতে ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান খরচায় ২ উইকেট নিয়েছেন খণ্ডকালীন অফস্পিনার শেফালি। দিপ্তী শর্মা ৪ ওভারে ১৩ রান দিয়ে দিয়েছেন দুইটি উইকেট। এছাড়া স্নেহ রানা ও রেনুকা সিংয়ের শিকার একটি করে উইকেট। এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে প্রথম দশ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়েই ৯১ রান করে ফেলেছিলেন ভারতের দুই ওপেনার স্মৃতি মান্ধানা ও শেফালি ভার্মা। পরে দুই লেগস্পিনার রুমানা আহমেদ ও ফাহিমা খাতুনের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শেষ ১০ ওভারে ৬৮ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত।
ইনিংসের ১২তম ওভারের শেষ বলে রানআউটে ভাঙে ভারতের উদ্বোধনী জুটি। ফাহিমার অফস্ট্যাম্পের বাইরের ডেলিভারি আলতো ঠেলে দিয়ে রানের কথা ভাবছিলেন শেফালি। ততক্ষণে এই ম্যাচের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্মৃতি চলে যান মাঝপিচে। রিতু মনির দারুণ ফিল্ডিংয়ের কারণে রান নেওয়া থেকে বিরত থাকেন শেফালি। কিন্তু যথাসময়ে আর নিজের ক্রিজে ফিরতে পারেননি স্মৃতি। ফলে ৩৭ বলে ৪৬ রানে থামতে হয় এ বাঁহাতি ওপেনারকে। এ রানআউটে ভাঙে ৯৬ রানের উদ্বোধনী জুটি।
স্মৃতির ফেরার পর শেফালির রান তোলার গতি কমে যায়। একপর্যায়ে ৩১ বলে ৪৬ রান নিয়ে খেলতে থাকা শেফালি ফিফটি করতে খেলেন সবমিলিয়ে ৪০ বল। ইনিংসের ১৫তম ওভারে প্রথমবারের মতো আক্রমণে এসেই ৫৫ রান করা শেফালিকে বোল্ড করেন রুমানা। নিজের পরের ওভারের শেষ দুই বলে জোড়া আঘাত হানেন রুমানা। এবার তার শিকারে পরিণত হন রিচা ঘোষ ও কিরন নাভগির। পরে ১৯তম ওভারে হ্যাটট্রিক বলেও উইকেটের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন রুমানা। কিন্তু জেমাইমার ফিরতি ক্যাচ ধরতে না পারায় হয়নি হ্যাটট্রিক।
সেই ওভারটিতে ১৫ রান খরচ করে ফেলেন রুমানা। হ্যাটট্রিক বলে জীবন পাওয়া জেমাইমা শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ৩৫ রান করে অপরাজিত থাকেন। শেষ ওভারে দারুণ বোলিংয়ে মাত্র ৬ রান দিয়ে দিপ্তী শর্মার (৫ বলে ১০) উইকেট নেন সালমা খাতুন। বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে ৩ ওভারে ২৭ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়েছেন রুমানা। যার সুবাদে চলতি এশিয়া কাপে ৮ উইকেট হলো তার। ফাহিমা উইকেট না পেলেও নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে ৪ ওভারে দিয়েছেন মাত্র ২১ রান। সালমা ৩ ওভারে ১৬ রানে নিয়েছেন একটি উইকেট।