বাবার সম্পত্তি ভাগ করে লিখে দিতে চাপ দেন সন্তানরা। এতে রাজি না হওয়ায় জন্মদাতা বাবাকেই পিটিয়ে আহত করেন তারা। বিষয়টি গোপন রাখতে আহত বাবাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন হামলাকারী সন্তানরাই। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শনিবার (২৯ অক্টোবর) ভোরে জীবনপ্রদীপ নিভে যায় হতভাগ্য বাবার।
পরে হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়িতে এনে গোপনে দাফনের প্রস্তুতি নেন সন্তানরা। তবে সব গোপনীয়তায়ও শেষ রক্ষা হয়নি সন্তানদের। খবর পেয়ে পুলিশ ওই বাড়িতে হাজির হয়ে বাবার লাশসহ সন্তানদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।ফরিদপুরের সালথা উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের দক্ষিণ আটঘর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। সন্তানদের হাতে নিহত বাবার নাম মো. খালেক সরদার (৫৫)। তিনি দক্ষিণ আটঘর গ্রামের মৃত মজিদ সরদারের ছেলে। স্ত্রীসহ তার তিন মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
নিহত খালেকের ভাই মালেক সরদার ও ভাতিজা মোজাম সরদার বলেন, খালেক স্ত্রী-সন্তাদেন নিয়ে আমাদের একই দক্ষিণ আটঘর গ্রামে আলাদা বাড়ি করে থাকেন। গত ১৪ অক্টোবর ভোরে খালেকের স্ত্রী-সন্তানরা এসে আমাদেল বলে খালেক আঘাত পেয়ে স্ট্রোক করেছে। তাকে হাসপাতালে নিতে হবে। পরে ওরাই তাকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করে।
এরই মধ্যে জানতে পারি, জমিজমা ভাগাভাগি নিয়ে ১৩ অক্টোবর রাতে খালেকের ছেলে সাব্বির সরদার, মেয়ে রুমা বেগম, সাবানা বেগম ও তার স্বামী রেজাউল হোসেন তাকে কাঠের বাটাম দিয়ে পিটিয়ে দুই পা ভেঙে ঘরে শুইয়ে রেখেছিল। পরদিন সকালে তার অবস্থা খারাপ হওয়ায় আমাদের খবর দিয়ে তারা খালেককে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
মালেক ও মোজাম আরো বলেন, ঘটনার পর আমরা হাসপাতালে গিয়ে দেখি তার অবস্থা চরম খারাপ। শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত ও কোপের দাগ। মারা যাওয়ার পর শনিবার সকালে তার লাশ বাড়িতে এনে গোপনে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল ওরা। খবর পেয়ে পুলিশ এসে খালেকের লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায়। এ সময় খালেকের স্ত্রী আম্বিয়া বেগম, ছেলে সাব্বির সরদার, মেয়ে রুমা বেগম ও সাবানা বেগমকেও আটক করে নিয়ে গেছে। তবে জামাই রেজাউল পালিয়ে যায়।
শনিবার বিকেলে খালেকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনসান নীরবতা। একটা মানুষ ওই বাড়িতে নেই। ঘরে ঝুলছে তালা। তবে এ সময় প্রতিবেশী মমতাজ বেগম ও সেলিনা বেগম জানান, খালেকের বড় মেয়ে রুমার বিয়ে হয়নি। তিনি বাবার বাড়িতেই থাকেন। মেজো মেয়ে সাবানার বিয়ে হয় রাজবাড়ীতে। তবে তিনিও কয়েক মাস ধরে স্বামী রেজাউলকে নিয়ে বাবার বাড়িতে এসে থাকা শুরু করেন। আর ছেলে সাব্বির স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে একই বাড়িতে থাকতেন।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সাদিক বলেন, ‘জমিজমা ভাগাভাগি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানরা গত ১৪ অক্টোবর খালেক সরদারকে বেদম মারধর করে গোপনে একটি হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে ২৫ অক্টোবর তাকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
আজ শনিবার হাসপাতালে মারা যাওয়ার পর লাশ ছেলে-মেয়েরা অ্যাম্বুল্যান্সে বাড়ি নিয়ে এলে খালেকের ভাইয়েরা আমাদের বিষয়টি জানায়। খবর পেয়ে আমরা লাশ উদ্ধার করে মর্গে প্রেরণ করেছি। সেই সঙ্গে নিহতের স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে থানায় নিয়ে আসি। এ বিষয় অভিযোগের ভিত্তিতে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’