ভক্তদের বিশ্বাস মেসি আছেন, আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপ জেতা ‘সময়ের ব্যাপার মাত্র’

কাতার বিশ্বকাপে স্টেডিয়ামের ভেতর সবচেয়ে বেশি সমর্থক পাওয়া দলগুলোর মধ্যে অন্যতম আর্জেন্টিনা। এর পেছনে কিছুটা ভাগ্যের অবদান রয়েছে বটে। তারা বেশিরভাগ ম্যাচ খেলেছে বিশ্বকাপের বৃহত্তম ভেন্যু দোহার লুসাইল স্টেডিয়ামে। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৮৯ হাজার মানুষ বসতে পারেন। তবে সেখানে নীল-সাদা রঙের ১০ নম্বর জার্সি পরা মেসি ভক্তদের সবাই কিন্তু একই দেশ থেকে যাননি, এমনকি তারা একই মহাদেশেরও বাসিন্দা নন।

গত ৯ ডিসেম্বর লুসাইল স্টেডিয়ামে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ দেখতে হাজির হয়েছিলেন বাহরাইনের নাগরিক আবদুর রহমান। ১৮ বছরের এ কিশোরের বহুদিনের স্বপ্ন লিওনেল মেসিকে সচক্ষে দেখা। ফলে ম্যাচের আগে মাঠের ভেতর আর্জেন্টাইন তারকাকে ওয়ার্ম আপ করতে দেখেই খুশিতে উদ্বেলিত হয়ে ওঠেন তিনি।

jagonews24বাহরাইন থেকে গেছেন আবদুর রহমান। ছবি সংগৃহীত

আবদুর রহমান বলেন, ২০১০ বিশ্বকাপের সময় আমার বয়স ছিল ছয় বছর। তখন থেকেই মেসিকে অনুসরণ করি। কখনো ভাবতে পারিনি, একদিন তার সঙ্গে আমি একই স্টেডিয়ামের ভেতরে থাকবো এবং একই বাতাসে নিঃশ্বাস নেবো। খেলা দেখতে মেসির নামযুক্ত আর্জেন্টিনার জার্সি পরে পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে এসেছেন ইঞ্জিনিয়ানিংয়ের ছাত্র আবদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমি আর্জেন্টিনা দলকে ভালোবাসি এবং আমার মনে হয় আমি তাদেরই একজন। তাই তাদের সঙ্গীত শিখেছি ও উদযাপন অনুশীলন করেছি।’

ভারতের কেরালা থেকে যাওয়া মুহাম্মদ আদিল এবং তার তিন ভাই-বোনও মেসির অন্ধভক্ত। কোয়ার্টার ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগে কাতারে পা রাখেন তারা। আর্জেন্টিনার বিশাল একটি পতাকা নিয়ে গোলপোস্টের পেছনের গ্যালারিতে বসেছিল ভারতীয় এ পরিবার। সেখান থেকেই শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ উপভোগ করেন সবাই। পেনাল্টি শুটআউটে আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত হতেই খুশিতে ফেটে পড়েন প্রত্যেকে।

jagonews24আদিল (বা থেকে দ্বিতীয়) ও তার ভাই-বোনেরা। ছবি সংগৃহীত

একগাল হাসি নিয়ে আদিল বলেন, মেসি হচ্ছে আমার সুখ। কয়েকশ মিটার দূর থেকে তাকে দেখা ছিল পরাবাস্তব ব্যাপার। এই মুহূর্তটি আমি সবসময় মনে রাখবো। শুধু আদিল নন, কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নাটকীয় জয়ের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন নানা দেশের নানা বর্ণের আর্জেন্টিনা ভক্তরা।

পাশে থাকা অচেনা-অজানা লোকদের জড়িয়ে ধরে, হাইফাইভ দিয়ে আনন্দ উদযাপন করেন তারা। তেমনই একজন হাওপেং ওয়াং। ২২ বছর বয়সী এ চীনা তরুণ বলেন, ‘মেসি আমার কাছে ঈশ্বরের মতো। তিনি একটি দুর্দান্ত অ্যাসিস্ট (গোল করতে সহায়তা) করেছেন এবং তার জাদু দেখিয়েছেন।’ কথাগুলো বলতে গিয়েই আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ওয়াং।

jagonews24মেসির খেলা দেখতে সুদান থেকে গেছেন ইয়াসিন। ছবি সংগৃহীত

খেলা দেখে স্টেডিয়াম থেকে বের হচ্ছিলেন আর্জেন্টিনা সমর্থক একদল বাংলাদেশি। তাদের হাতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা। তারা বাংলা ভাষাতেই মেসির গুণগান করছিলেন। ফখরুল ইসলাম নামে তাদের একজন জানান, তারা বলছিলেন, মেসির বিশ্বকাপ দরকার এবং বিশ্বকাপেরও মেসিকে দরকার। ফখরুল বলেন, ‘মেসি যদি তার ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপ না জিততে পারেন, তবে এটি হবে ফুটবলের জন্য লজ্জাজনক।’

আকাশের দিকে দু’হাত তুলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সবার দোয়া রয়েছে তার (মেসি) সঙ্গে।’ আর্জেন্টিনা তৃতীয়বারের মতো বিশ্বকাপ জিতবে, এ বিষয়ে অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী সুদানিজ সমর্থক ইয়াসিন। মুখভর্তি হাসি নিয়ে লুসাইল স্টেডিয়াম থেকে বের হচ্ছিলেন তিনি। তার হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে স্প্যানিশ ভাষায় লেখা, ‘মেসি আছেন, বিশ্বকাপ জেতা সময়ের ব্যাপার মাত্র!’

সূত্র: আল-জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *