বিদ্যুৎ বিভ্রাট, তেল ও সুতার দাম বাড়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে তাঁতশিল্পে

সিরাজগঞ্জে বিদ্যুৎ বিভ্রাট, তেল ও সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে তাঁতশিল্পে। এতে অর্ধেকে নেমেছে উৎপাদন। বাধ্য হয়ে পেশা ছাড়তে শুরু করেছেন তাঁতমালিক ও শ্রমিকরা। তাঁতমালিকরা বলছেন, উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে, কিন্তু সেই তুলনায় কাপড়ের দাম বাড়েনি। এতে কাপড় উৎপাদন কম হচ্ছে। বিক্রির টাকায় উৎপাদন খরচ পোষানো কঠিন হয়ে পড়েছে। তাঁতশিল্পের এমন বিপর্যয় এড়াতে সরকারের সহায়তা চান তারা।

বুধবার (২৬ অক্টোবর) সকালে বেলকুচির তামাই এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে তাঁতমালিকরা কারখানার উৎপাদন সচল রাখতে ডিজেলচালিত জেনারেটর ব্যবহার করছেন। আবার যেসব কারখানায় জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে না, তাদের শ্রমিকরা অলস সময় পার করছেন।

সিরাজগঞ্জ পাওয়ারলুম অ্যান্ড হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯টি উপজেলায় প্রায় এক লাখ ২৫ হাজার তাঁত রয়েছে। এসব তাঁত কারখানায় সুতা তৈরি, সুতায় রং দেওয়া, সুতা শুকানো ও কাপড় উৎপাদনের জন্য ২-৩ জন শ্রমিকের প্রয়োজন। মালিক ও শ্রমিক মিলে প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ এ শিল্পের সঙ্গে জড়িত। কিন্তু সম্প্রতি সুতা, মজুরি ও ডিজেলের দাম বাড়ায় লুঙ্গি, শাড়ি ও গামছা তৈরিতে অতিরিক্ত ব্যয় হচ্ছে।

কামারখন্দ উপজেলার তাঁতি আবুল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়া ও ডিজেল তেলের মূল্য বাড়ায় বেশিরভাগ তাঁত কারখানা বন্ধ রয়েছে। আগে যে কারখানায় ২০ জন শ্রমিক কাজ করতেন, বর্তমানে সেখানে রয়েছেন ৬-৮ জন। এতে উৎপাদন কম হচ্ছে। সেইসঙ্গে বেকার হচ্ছেন আমাদের মতো শ্রমিকরা।’

বেলকুচি উপজেলার বানিয়াগাঁতী গ্রামের শাড়ি তৈরির শ্রমিক আবু হেলাল বলেন, আগে প্রতিদিন ৩-৪টি চারটি শাড়ি তৈরি করতাম। এখন ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় দুটি শাড়িও তৈরি করা যায় না। শাহজাদপুর উপজেলার রূপনাই গ্রামের শ্রমিক জেলহক জানান, প্রায় এক যুগ ধরে তিনি তাঁতের শ্রমিক হিসেবে কাজ করে ১০ জনের সংসার চালান। কাজ যতই কম থাকুক না কেন, প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ২-৩ হাজার টাকা বিল পেতেন। এখন বিদ্যুতের কারণে তাও হচ্ছে না।

তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আমিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় জেনারেটর দিয়ে কারখানা চালু রাখা হতো। হঠাৎ তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় জেনারেটরও বন্ধ রেখেছি। এতে উৎপাদন কমেছে।’সদর উপজেলার সুতা ব্যবসায়ী আসলাম সরকার  বলেন, একদিকে বিদ্যুৎ বিভ্রাট অন্যদিকে সুতার মূল্যবৃদ্ধি। সবমিলিয়ে তাঁতমালিকদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, এক বছর আগে ৫০ কাউন্টের এক বস্তা সুতার দাম ছিল ১৪ হাজার ৫০০ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে ২২ হাজার ২০০ টাকা। এমন পরিস্থিতে ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে। সিরাজগঞ্জ পাওয়ারলুম অ্যান্ড হ্যান্ডলুম ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদিউজ্জামান বলেন, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বেশিরভাগ সময় কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকছে। এই শিল্পকে বাঁচাতে দ্রুত সরকারকে বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।

সিরাজগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর মহাব্যবস্থাপক রমেন্দ্র চন্দ্র রায় বলেন, জেলায় দিনে প্রয়োজন ৬০-৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৪৫ মেগাওয়াট। রাতে প্রয়োজন হয় ১০০-১০৫ মেগাওয়াট, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ৭০-৭৫ মেগাওয়াট। ফলে স্বাভাবিকভাবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।

বেলকুচি পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার সানোয়ার হোসেন বলেন, আমরা যেভাবে বিদ্যুৎ পাই, ঠিক সেভাবেই বণ্টন করে থাকি। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরলে এ সমস্যা থাকবে না।

এ বিষয়ে বেলকুচি তাঁত বোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসার তন্নী সরকার  বলেন, এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তবে বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে তাঁতশিল্পে উৎপাদন অনেক কমে গেছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন স্বাভাবিক হলেই আবার প্রাণ ফিরে পাবে এই শিল্প।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *